বিশেষ প্রতিনিধিঃ কেউ কেউ স্বপ্ন দেখে ঘুমের ভেতর, আর কেউ স্বপ্ন দেখেই জেগে থাকে-দেশকে, প্রজন্মকে, ভবিষ্যৎকে বদলে দেওয়ার জন্য। তেমনই এক জাগ্রত স্বপ্নবাজের নাম লিমন মিয়া। যিনি বিশ্বাস করেছেন-বাংলাদেশের মাটিতেও জন্ম নিতে পারে এমন এক প্রতিষ্ঠান, যা একদিন বিশ্বের মঞ্চে উচ্চারণ করবে-“We are from Bangladesh.” ২০১৯ সাল। লিমন মিয়া তখন এক তরুণ আইটি উদ্যোক্তা, হাতে সীমিত পুঁজি, কিন্তু মনে অগাধ আত্মবিশ্বাস। তিনি শুরু করেন একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম-Bazaron24.com। এই উদ্যোগ ছিল তাঁর প্রথম বাস্তব পদক্ষেপ-যার মাধ্যমে তিনি অনলাইন ব্যবসার সম্ভাবনা অনুধাবন করেন। তখনই তিনি উপলব্ধি করেন, শুধু পণ্য বিক্রিই নয়-বাংলাদেশের তরুণদের হাতে প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যৎ তুলে দেওয়াই হতে পারে প্রকৃত পরিবর্তনের শুরু। এই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় পরবর্তী অধ্যায়ের স্বপ্ন-Next CEO Ltd. মাত্র দুই বছরের মধ্যে Bazaron24.com রূপ নেয় এক নতুন দিগন্তে। ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে Next CEO Ltd. নামে একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, যার মূল দর্শন ছিল “Empower Through Technology”। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই লিমন মিয়া প্রতিষ্ঠানটিকে সাজাতে শুরু করেন নবীন ও মেধাবী তরুণদের দিয়ে। তারা একসাথে কাজ করতে থাকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ তৈরি, গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, কনটেন্ট প্রোডাকশনসহ নানা আইটি সেবায়। ধীরে ধীরে, দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে-দুই জায়গাতেই তৈরি হয় তাদের সুনাম। Next CEO Ltd. তাদের প্রতিটি প্রকল্পে নিয়ে আসে নতুনত্ব। সকলের কাছে তারা শুধু সেবা প্রদানকারী হিসেবেই নয়, বরং ডিজিটাল সমাধান সৃষ্টিকারী একটি দল হিসেবে খুব তাড়াতাড়ি পরিচিতি পায়। দেশের বিভিন্ন নামী-দামী প্রতিষ্ঠান যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এনজিও, কর্পোরেট ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কোম্পানিটি গড়ে তোলে এক শক্ত অবস্থান। তাদের সাফল্যের মূলমন্ত্র ছিল একটাই-বিশ্বাস, মেধা ও পরিশ্রম। দেশে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২৩ সালে Next CEO Ltd. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করে Next CEO USA-যার সদরদপ্তর এখন ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। এই অফিসের মাধ্যমে কোম্পানিটি আমেরিকা ও ইউরোপের ক্লায়েন্টদের জন্য গ্লোবাল আইটি সার্ভিস প্রদান করছে। বর্তমানে তাদের বাংলাদেশে চারটি ব্রাঞ্চ (ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রাম) আর যুক্তরাষ্ট্রে একটি পূর্ণাঙ্গ শাখা অফিস রয়েছে। এই সম্প্রসারণ প্রমাণ করে, বাংলাদেশের তরুণরাও বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান গড়তে সক্ষম, যদি থাকে স্বপ্ন দেখার সাহস ও নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি। Next CEO Ltd. এর সবচেয়ে আলোচিত ও যুগান্তকারী প্রকল্প হলো Next CEO Dropshipping। এটি এমন একটি উদ্যোগ, যা বাংলাদেশের বেকার ও প্রান্তিক তরুণদের জন্য খুলে দিয়েছে নতুন কর্মসংস্থানের দরজা। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যে কেউ ঘরে বসেই অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে পারে, বিনা ঝুঁকিতে, বিনা পুঁজিতে, কোম্পানির কারিগরি সহায়তা নিয়ে। প্রশিক্ষণের পর তরুণরা নিজ নিজ অনলাইন স্টোর পরিচালনা করতে পারে, যেখান থেকে মাসে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য প্রতি বছর অন্তত ১০,০০০ নতুন যুবককে কর্মসংস্থানের আওতায় আনা। Next CEO Ltd. এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ লিমন মিয়া বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণ নিজের ঘর থেকেই স্বপ্ন গড়ুক, কর্মী নয় নিজের জীবনের উদ্যোক্তা হোক।” লিমন মিয়া বিশ্বাস করেন-“প্রতিটি তরুণের ভেতরেই একেকজন নেতা লুকিয়ে আছে।” এই দর্শন থেকেই এসেছে কোম্পানির নাম-Next CEO। এখানে কেউ শুধু কর্মচারী নয়, বরং একেকজন ভবিষ্যতের উদ্যোক্তা। প্রতিষ্ঠানে কাজের পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে বন্ধুত্ব, সৃজনশীলতা এবং পারস্পরিক শেখার ভিত্তিতে। তরুণদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, অনলাইন ওয়ার্কশপের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে এক নতুন প্রজন্মের ডিজিটাল লিডার। Next CEO Ltd. ইতিমধ্যে বাংলাদেশে নিজেদের স্থায়ী স্থান দখল করেছে আইটি খাতে। প্রতিষ্ঠানটি এখন শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও রিসার্চ-ভিত্তিক তিনটি নতুন উদ্যোগে কাজ করছে। Next CEO Education, Next CEO Marketing, এবং Next CEO Foundation। তাদের লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ আইটি ব্র্যান্ডগুলোর একটি হওয়া, এবং বাংলাদেশের প্রযুক্তি রপ্তানি আয় বছরে অন্তত ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো। বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন এটি এক উন্মুক্ত ক্ষেত্র- যেখানে স্বচ্ছতা, প্রযুক্তি এবং তরুণ নেতৃত্বের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। লিমন মিয়া প্রমাণ করেছেন-স্বপ্ন যদি দৃঢ় হয়, তবে অসম্ভব বলে কিছু থাকে না। একটি ছোট ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে আজ তিনি গড়ে তুলেছেন এমন এক প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশের নাম বহন করছে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে। Next CEO Ltd. এখন শুধুমাত্র একটি কোম্পানির নামই নয়, এটি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের আত্মবিশ্বাস, উদ্যম এবং সম্ভাবনার প্রতীক। যে স্বপ্ন শুরু হয়েছিল তরুধ লিমনের ডেস্ক থেকে, আজ তা ছুঁয়ে ফেলেছে দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বের দিগন্ত।