

সাকিব আহসান
প্রতিনিধি,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও
পীরগঞ্জের ৭ নং হাজীপুর ইউনিয়নের একান্নপুর থেকে কৃষ্টপুর পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ যেন সময়ের বাইরে পড়ে থাকা এক ভূগোল। সরকার বদলেছে, জনপ্রতিনিধি বদলেছে, বাজেট ঘোষণা হয়েছে বহুবার কিন্তু এই সড়কের হালচাল বদলায়নি একচুলও। এটি রাস্তা নয়, বরং জনদুর্ভোগের একটি দীর্ঘায়িত স্মৃতিস্তম্ভ।
প্রথম সত্যটি অস্বীকারের সুযোগ নেই এই রাস্তাটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মাঠে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হলেও বাস্তবে সবচেয়ে কম অগ্রাধিকার পেয়েছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন গ্রামপথ নয়; শুধুমাত্র একান্নপুর বাগানবাড়ি থেকে এগিয়ে গেলেই রয়েছে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যথাক্রমে কৃষ্টপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজীপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও হাজীপুর মহাবিদ্যালয়। অর্থাৎ এই রাস্তা শুধুই যাতায়াতের পথ নয়, হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের পথ।
কিন্তু বর্ষা এলেই এই পথ পরিণত হয় কাদা-জলে ভরা বিপজ্জনক খন্দকে। হাঁটা যায় কষ্টে, বাইক বা ভ্যান চলে ঝুঁকি নিয়ে, আর জরুরি পরিস্থিতিতে রাস্তাটি যেন পুরো এলাকা থেকে বাকি পৃথিবীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
মোখলেসুর ও নজরুলের মতো স্থানীয়রা প্রতিদিন এই ভোগান্তির মুখোমুখি হন। তাদের বক্তব্য শুধু অভিযোগ নয়, এটি রাষ্ট্রের প্রতি এক নির্মম প্রশ্ন:
“আমরা কি রাষ্ট্রের নাগরিক নই? আমাদের সন্তানদের নিরাপদে স্কুলে পৌঁছানোর অধিকার নেই?”
তাদের এই প্রশ্ন প্রকৃত অর্থে একটি সামষ্টিক ব্যর্থতার প্রতীক। দীর্ঘ বছর ধরে এই সমস্যা বিদ্যমান, কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।
সমস্যার মূলে রয়েছে অগ্রাধিকার নির্ধারণে চরম ব্যর্থতা
উন্নয়ন বাজেটের কথা প্রচুর শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবে এই রুট কখনোই প্রাধান্য পায়নি। যে রাস্তা দিয়ে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চলে, সেটি অবহেলার তালিকায় থাকা নীতিগত ব্যর্থতা।
মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং শূন্যতার মতো
ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রকৌশল অফিস বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কেউই এই রুটের স্থায়ী সমাধানে পরিকল্পনামূলক উদ্যোগ নেননি। প্রতিবছর শুধু পরিদর্শনের ছবি তোলা বা আশ্বাস দেওয়া, এটাই যেন রুটিন।
জবাবদিহির অভাবের
সমস্যাটি বছরের পর বছর ধরে চললেও কোনো সংস্থা বা প্রতিনিধি কখনো দায় স্বীকার করেননি। যখন জবাবদিহি নেই, তখন ব্যর্থতাই নীতি হয়ে দাঁড়ায়।
এই সমস্যাকে আর ‘গ্রাম্য রাস্তার সংকট’ হিসেবে দেখলে ভুল হবে।
এটি একটি সমভাবে বণ্টিত অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ যাতায়াত, সবকিছুর বিরুদ্ধে একটি সরাসরি হস্তক্ষেপ।
যে পথে শিক্ষার্থী, কৃষক, রোগী, শ্রমজীবী মানুষ চলাচল করেন, সেই পথ দীর্ঘদিন অবহেলিত রাখার অর্থ হলো তাদের উন্নয়নকে ইচ্ছাকৃতভাবে পিছিয়ে রাখা।
পীরগঞ্জের এই সড়কের দুর্দশা কেবল একটি পথের দুর্দশা নয়, এটি উন্নয়ন ও সমতার প্রতিশ্রুতির অপূর্ণতার নগ্ন প্রমাণ। এই অবহেলা আর চলতে দিলে ক্ষতি শুধু যাতায়াতের হবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে এক পুরো প্রজন্মের সম্ভাবনা। এখন প্রয়োজন কর্তৃপক্ষের দ্রুত, দৃশ্যমান এবং জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ। এটাই ন্যূনতম ন্যায়।
৮০ রুপায়ন টাওয়ার, লেভেল -৩ (লিফটের 3), কাকরাইল, ঢাকা 1000, সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ শরিফুল আলম, সহ প্রকাশক: মোঃ ফারুক হোসেন । মোবাইল: 01604 872 968
Millennium NEWS BD