নিজস্ব প্রতিনিধি:
অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন ও আবাদি জমির মাটি কেটে ইট ভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি। আবাদি জমিতে গভীর খনন করে মাটি কাটায় কমছে জমির উর্বরতা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, উলিপুর উপজেলা৩ নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের ডিগডারী নামক নদীতে অবৈধ ভাবে চলছে বালু উত্তোলন। অবাধে বালু তোলায় হুমকির মুখে ডিগডারী নদীর দুই পারের জনবসতি। আবাদী জমি গুলো নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার প্রভাবশালী লোকজন প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ডিগডারী নদী থেকে ড্রেজিং মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করছে। আবার কয়েক দিন আগে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ২৫ থেকে ৩০টির মত ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছিলো। পরবর্তীতে সেখানে মাটি না থাকায় নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু করলে নদীর মধ্যে একাধিক স্থানে গভীর কূপ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আইনি ব্যবস্থা সঠিক ভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় বালু উত্তোলনকারী ভূমিদস্যুরা তাদের এসব অবৈধ কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছে।
সচেতন মহলের অভিযোগ, এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
অনিয়ন্ত্রিত ভাবে এসব বালু উত্তোলনের কারণে নদীর বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি, সড়ক ও বাঁধসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করলেও বন্ধ হয়নি মাটি কাটা।
উলিপুর উপজেলা বিএনপির ৩নং ওয়ার্ড সভাপতি মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক সহ আরো অনেকেই এসব অবৈধ মাটি-বালু উত্তোলনকারী ভূমি দস্যুদের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে, বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
বালু উত্তোলনের ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে এলাকার জনসাধারণকে ভয়ানক অবস্থায় পড়তে হবে। তখন দুর্ভোগ দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
অপরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণির অসাধু প্রভাবশালী যার ফলে ডিগডারী নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।কেউ বাধা দিলে আসে হুমকি-ধামকি। তবে একজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করায় তিনি এই বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বালু উত্তোলন ও মাটি বিক্রি দুটোর সাথে জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নামধারী নেতা। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলেনা।
উলিপুর উপজেলা এক কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এই ইউনিয়নে প্রায় কয়েক টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি ইট ভাটার ইট পোড়ানোর লাইসেন্স রয়েছে। অপর কয়েক টি ইটভাটা লাইসেন্সবিহীন অবস্থায় চালু রয়েছে। এসব ইটভাটায় অব্যাহতভাবে আবাদি জমি গভীর ভাবে খনন করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জমির মালিকরা টাকার লোভে ইটভাটা মালিকদের কাছে মাটি বিক্রি করে ফসলি জমির ক্ষতি করছেন।
তিনি জানান, গত ১০ বছরে শুধু এই একটি উপজেলায় কয়েক শত হেক্টর জমির মাটি বিক্রি করার কারণে তিন ফসলি জমির ফসল উৎপাদন কার্যক্রম বিনষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে প্রতি বছর উর্বর ফসলি জমির মাটি গভীর ভাবে কেটে নিয়ে যাওয়ার কারণে ফসলি জমির সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
ইটভাটা মালিকরা টাকার প্রলোভন দিয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে ফসলি জমির মাটি গভীরভাবে খনন করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে খনন করা জমিতে আর ফসল চাষের কোনো উপায় থাকে না। এভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহা বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে। এর মধ্যে কয়েক জন বালু উত্তোলনকারীকে জরিমানা করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, টাকার লোভে আবাদি জমির মাটি বিক্রি করায় আবাদি জমির সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি আশংকাজনক।
তিনি আরো বলেন, ‘অভিযানের খবর বালু উত্তোলনকারীরা আগেই পেয়ে যান। যার কারণে
বেশির ভাগ অভিযান ব্যর্থ হয়ে যায়। তারপরও এই অভিযান চলতে থাকবে।