মালয়েশিয়ায় ফিলিস্তিন ইস্যুতে সব ধর্ম-বর্ণের সংহতি গড়ার আহ্বান
মো: এলাহী মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ায় ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে আরও সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গ্লোবাল পিস মিশনের (জিপিএম) চেয়ারম্যান ও সিনেট সদস্য ড. জুফিতরি জোহা।বুধবার অনুষ্ঠিত ‘হিমপুনান সলিডারিটি গাজা’ সমাবেশে বক্তব্যে তিনি বলেন, ফিলিস্তিন শুধু মুসলমানদের ধর্মীয় বা আকিদাগত বিষয় নয়—এটি একটি বৈশ্বিক মানবিক সংকট।
তিনি আরও বলেন, অ্যান্টনি লোয়েনস্টাইন, অ্যাডাম শাপিরো ও ইসরায়েল শামিরের মতো অনেক ইহুদি কর্মীও দেখিয়েছেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সংগ্রাম মানবতার ইস্যু। মালয়েশিয়ায় এখনো অমুসলিম সমাজে সচেতনতার ঘাটতি আছে। তাই আজ এবং ভবিষ্যতের প্রতিটি আয়োজনে আমরা চাই, অমুসলিম বন্ধুরাও যেন এই বিষয়টিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন।
একই অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার ইসলামিক বোঝাপড়া ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাদিয়া দাতুক মোহাম্মদ আজাম মোহাম্মদ আদিল বলেন, যে কোনো বিবেকবান মানুষ ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যাকে উপেক্ষা করতে পারে না। ধর্ম বা জাতিগত বিভেদ ছাড়াই মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।তিনি আরও যোগ করেন, মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য অন্য মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা। যারা নিরীহ মানুষকে কষ্টে দেখে চুপ থাকে, তারা মানবতার চেয়েও নিচে নেমে যায়।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম। প্রায় ১৬–২০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই সংহতি সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি মোহাম্মদ হাসান এবং দাতুক সানি আরাবি আল-কাহেরি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় সহায়তা পাঠানো গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মিশনটি ইসরায়েলি বাহিনীর বাধার মুখে পড়ার পর, মালয়েশিয়া এখন কূটনৈতিক ও মানবিক দুইদিক থেকেই নতুন পথ খুঁজছে—যেন পরবর্তী মানবিক মিশন স্থলপথে গাজায় পৌঁছাতে পারে।
তিনি জানান, আমি সহকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করব—নাদিরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন কৌশল নির্ধারণ করব। এরপর আমি মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে যোগাযোগ করব, যেন রাফাহ সীমান্ত মানবিক মিশনের জন্য উন্মুক্ত হয়।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ব এখন নীরব থাকতে পারে না। আমরা বর্বর যুগে নেই—এটা সভ্যতার যুগ। গাজার মানুষদের খাবার, পানি, শিক্ষা, চিকিৎসা ও উপাসনালয়ের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার রাতে বুকিত জলিলের অক্সিয়াটা অ্যারেনা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই সংহতি সমাবেশে এসব কথা বলেন। সেখানে সদ্য দেশে ফেরা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মিশনের ২৩ জন মালয়েশিয়ান স্বেচ্ছাসেবী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে সুমুদ নুস্তারাঁ কমান্ড সেন্টারের মহাপরিচালক দাতুক ড. সানি আরাবি আবদুল আলিম প্রধানমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়, ফিলিস্তিনের জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা মানবিক মিশন চালু করতে যেন পূর্ণ সহায়তা দেওয়া হয়।
ড. সানি বলেন, আমরা জানি দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমরা চাই, সেই সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে রাফাহ সীমান্তের দরজা খুলে দেওয়া হোক, যেন মালয়েশিয়া থেকে সরাসরি স্থলপথে সাহায্য পাঠানো সম্ভব হয়।
তিনি আরও যোগ করেন, আমরা প্রস্তুত—ইনশাআল্লাহ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের মিশন আমরা বাস্তবায়ন করব। আর যদি একদিন গাজা মুক্ত হয়, আমরা চাই দাতুক সেরি নিজেই নেতৃত্ব দিন, মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে গাজা পুনর্গঠনে।
মালয়েশিয়ার এই পদক্ষেপ কেবল মানবিক সহায়তা নয়, বরং আঞ্চলিক কূটনীতিতেও এক নতুন অধ্যায় সূচিত করছে।কায়রো ও কুয়ালালামপুরের মধ্যে সরাসরি সহযোগিতা গড়ে উঠলে তা গাজা উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর কার্যকর পথ তৈরি করবে।বিশেষজ্ঞদের মতে, আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের নৈতিক কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে যা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের ভূমিকা আরও জোরদার করতে পারে।